SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK
Please, contribute to add content into আকাইদ – বিশ্বাস.
Content

আমরা জানি, কাঠমিস্ত্রি কাঠ দিয়ে চেয়ার, টেবিল, খাটসহ আরও অনেক কিছু তৈরি করে। রাজমিস্ত্রি ইটের ওপর ইট সাজিয়ে দালানকোঠা তৈরি করে। বড় বড় ইমারত তৈরি করে। এসব কোনো কিছুই নিজে নিজে তৈরি হয় না। কেউ সৃষ্টি না করলে কোনো কিছুই সৃষ্টি হয় না।

আমাদের মাথার ওপর সুন্দর সুনীল আকাশ, মিটিমিটি তারা, গ্রহ-উপগ্রহ, পৃথিবী থেকে তেরো লক্ষ গুণ বড় প্রখর সূর্য নিজে নিজেই কি সৃষ্টি হয়ে গেছে? না, সবকিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। তিনি কে? তিনি মহান আল্লাহ্।

সবার আগে আমাদের প্রয়োজন আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা ও ইমান আনা। কেননা মহান আল্লাহ আছেন এ সম্পর্কে যদি আমাদের পূর্ণ ইমান না থাকে, তা হলে কী করে আল্লাহর আদেশ মতো চলব? এর সাথে সাথে প্রয়োজন আল্লাহ তায়ালার গুণাবলি সম্পর্কে জানা। আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই।

আল্লাহ সবকিছু দেখেন, শোনেন এবং সবকিছুর খবর রাখেন- এর ওপর আমাদের দৃঢ় ইমান থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালার পুণাবলি সম্পর্কে সার্বিক জ্ঞান না থাকলে ইসলামের সরল সহজ পথে চলা কিছুতেই সম্ভব নয়।

এরপর আমাদের জানতে হবে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনযাপন করার সঠিক পথ কোনটি। কী কী কাজ আল্লাহ পছন্দ করেন, যা আমরা করব? আর কোন কোন কাজ অপছন্দ করেন, যা থেকে আমরা দূরে থাকব। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহর আইন ও বিধানের জ্ঞান অর্জন করা আমাদের জন্য ফরজ। আল্লাহর বিধান আছে কুরআন মজিদে। কুরআন মজিদ আমাদের পড়তে হবে ও বুঝতে হবে। আল্লাহর আদেশগুলো পালন করতে হবে। নিষেধ থেকে দূরে থাকতে হবে।

আমাদের আরও জানতে হবে, আল্লাহর ইচ্ছার বিরোধী পথে চলার পরিণাম কি? আর তাঁর আদেশ মেনে চলার পুরস্কারই বা কী? এ উদ্দেশ্যে আমাদের কবর, কিয়ামত, হাশর, মিযান, জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে জানা ও ইমান থাকা অপরিহার্য। এ আলোচনায় যেসব বিষয় জানতে ও বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে, তারই নাম হচ্ছে ইমান। ইমান অর্থ বিশ্বাস স্থাপন। যে ব্যক্তি আল্লাহর একত্ব, তাঁর গুণাবলি, তাঁর বিধান এবং তাঁর পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কে জানে এবং অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে তাকে বলা হয় মুমিন । আর ইমানের ফল হলো মানুষকে আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে গড়ে তোলা ।

দলীয় কাজ: আল্লাহর পরিচয় জানার জন্য যেসব বিষয়ের জ্ঞান থাকা জরুরি শিক্ষার্থীরা দলে বসে পরস্পর আলাপ-আলোচনা করে সেসব বিষয়ের একটি তালিকা তৈরি করবে। এরপর মার্কার দিয়ে গোস্টার পেপারে বড় বড় করে লিখবে।

আমরা জানলাম আনুগত্যের জন্য ইমানের প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হলো, আল্লাহর গুণাবলি, তাঁর দেওয়া বিধান ও আখিরাতের জীবন সম্পর্কে আমরা কীভাবে জানব?

আমাদের চারদিকেই ছড়িয়ে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য সৃষ্টি, বা তাঁর অস্তিত্বের নিদর্শন। এসব নিদর্শন সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, এ সবকিছুই একই স্রষ্টার সৃষ্টি।

কত সুন্দর আমাদের এই দেশ। কত সুন্দর আমাদের এই পৃথিবী! সবুজ ফসলের মাঠ। মাঠভরা সোনালি ধান। বন, বাগান, গাছ-গাছানি। কুল কুল শব্দে বয়ে যায় নদী। ওপরে নীল আকাশ। রাতে তারা ঝলমল করে। কোনো সময় শীত। কোনো সময় গরম । কোনো সময় ঝরে বৃষ্টি। এ সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। এসব নিদর্শনের ভেতরে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার যাবতীয় গুণের প্রকাশ। তাঁর হেকমত, তাঁর জ্ঞান, তাঁর কুদরত, তাঁর দয়া, তাঁর লালন-পালন, এক কথায় তাঁর সব গুণের পরিচয়। এসব নিদর্শন আমাদের চোখের সামনে রয়েছে। এসব সৃষ্টি সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, এ সবকিছুই একই স্রষ্টার সৃষ্টি ।

এ ছাড়া আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানি করে মানুষেরই মধ্য থেকে এমন সব মহামানৰ সৃষ্টি করেছেন, যাঁদের তিনি দিয়েছেন নিজের গুণাবলি সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান। মানুষ যাতে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারে, তার নিয়মই তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন। আখিরাতের জীবন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিয়েছেন। এরপর তাঁদের নির্দেশ দিয়েছেন অপর মানুষের নিকট এসব পৌঁছে দিতে। এঁরাই হচ্ছেন আল্লাহর নবি-রাসুল। তাঁদের জ্ঞানদানের জন্য আল্লাহ যে মাধ্যম ব্যবহার করেছেন, তার নাম হচ্ছে শুহি। আর যে কিতাবে তাঁদের এ জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাকে বলা হয় আল্লাহর কিতাব। কুরআন মজিদ আল্লাহর কিতাব।

পরিকল্পিত কাজ : আল্লাহ্ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তাঁর দশটি সৃষ্টির একটি তালিকা শিক্ষার্থীরা তৈরি করে পোস্টার পেপারে মার্কার দিয়ে লিখবে।

Content added By

মহান আল্লাহ তায়ালার অনেকগুলো সুন্দর নাম আছে এগুলোকে আসমাউল হুসনা বলে । আল্লাহ তায়ালার গুণে নিজেকে গুণান্বিত করতে পারলে চরিত্র ভালো হয়। ভালো মানুষ হওয়া যায়। যেমন, আল্লাহ দয়ালু। তিনি সবাইকে দয়া করেন। আমরাও সবাইকে দয়া করব। আল্লাহ ‘রব’। তিনি সকল সৃষ্টিকে লালনপালন করেন। আমরাও তাঁর সৃষ্টিকে যথাসাধ্য লালনপালন করব। আল্লাহ্ 'রাজ্জাক'। তিনি সবার খাদ্য দেন। আমরাও ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেব। তাই ইসলামে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়ার নির্দেশ রয়েছে।

                                                                 অর্থ : তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও।

আল্লাহর গুণ সম্পর্কে জানা থাকলে আল্লাহর আদেশমতো চলা সহজ হয়। অন্যায় থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয় ।

আল্লাহ সবকিছু দেখেন 

     সব কথা শোনেন, 

সবকিছুর খবর রাখেন ৷

এ কথাগুলো জানা থাকলে এবং এ কথাগুলোর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস থাকলে কারও পক্ষে অন্যায় করা সম্ভব নয়। ঠিকভাবে সে আল্লাহর আদেশ মেনে চলতে পারে।

কুরআন মজিদে মহান আল্লাহর অনেক গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো থেকে কয়েকটি গুণের কথা আমরা জানব ৷

Content added By

আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের নামই হচ্ছে ইসলাম। এই আনুগত্যের জন্য প্রয়োজন আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও গুণাবলি সম্পর্কে জানা ও ইমান আনা। আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে পূর্বের পাঠে আমরা জেনেছি। এখন আমরা আল্লাহর গুণাবলি সম্পর্কে জানব।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের রব। আমাদের পালনকর্তা। আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সবকিছু লালনপালন করেন। গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু, সবারই খাদ্যের প্রয়োজন হয়। লালন-পালনের দরকার পড়ে। সবার খাদ্য এক রকম নয়। আমরা ভাত, মাছ, গোশত, ফলমূল খাই। পশুপাখি খায় ঘাস ও পোকামাকড় ইত্যাদি। কিছু গাছপালা এসব কিছু খেতে পারে না। পাছপালার মুখ নেই। তারা মাটি থেকে শিকড় দিয়ে পানি শুষে নেয়। আর বাতাস থেকে নেয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড। এ দিয়ে তারা খাদ্য তৈরি করে।

আমরা সব সময় শ্বাস নিই এবং শ্বাস ফেলি। শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া কোনো জীব বাঁচে না। জীবের শ্বাস ফেলার সময় কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত বায়ু বের হয়। গাছ এই কার্বন-ডাই- অক্সাইড গ্রহণ করে খাদ্য তৈরির উপাদান হিসেবে। আর আমাদের জন্য হাড়ে অক্সিজেন। শ্বাস নেওয়ার সময় আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি। অক্সিজেন ছাড়া কোনো জীব বাঁচতে পারে না। এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় আল্লাহর মহিমা কত বড়। আমাদের জন্য বা বিব, পাছপালার জন্য তা খাদ্য তৈরির উপাদান। গাছপালার মাধ্যমে আমরা অক্সিজেন পাই, ফলমূল ও খাদ্য পাই। কত ভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের লালন-পালন করেন।

আমরা জানি, পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া কোনো জীব বেঁচে থাকতে পারে না। পানি ছাড়া গাছপালাও বাঁচে না। প্রতিদিন আমাদের প্রচুর পানি ব্যবহার করতে হয়। এ পানি আমরা কোথা থেকে পাই?

প্রতিদিন সূর্যের তাপে নদীনালা, খালবিল ও সাগরের পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। এই জলীয় বাষ্প বাতাসে ভেসে বেড়ায়। পরে ঠাণ্ডা হলে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। এই পানির কিছু অংশ মাটির নিচে জমা হয় আর কিছু অংশ পুকুর, নদীনালা, খালবিল ও সাগরে গিয়ে পড়ে।

মাটির নিচে জমা পানি কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে আমরা পাই। এ পানি বিশুদ্ধ পানি । বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নদনদী, খালবিল এবং পুকুরের পানিও আমরা ব্যবহার করি। এসবের পানি যাতে বিশুদ্ধ থাকে, আমরা সেদিকে খেয়াল রাখব।

ভাবতে অবাক লাগে, পরম করুণাময় আল্লাহ পানিচক্রের মাধ্যমে কেমন করে আমাদের প্রতিনিয়ত বিশুদ্ধ পানির জোগান দিয়ে চলেছেন। এ পানি, বৃষ্টি, নদীনালা, সাগর ও মহাসাগর সবই আল্লাহর দান।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে তোমরা ভেবে দেখেছ কি? এ পানি মেঘ থেকে তোমরাই নামিয়ে আন, না আমি তা বর্ষণ করি।’ (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত: ৬৮–৬৯)

আলো, বাতাস, পানি সবই আল্লাহ তায়ালার দান। আল্লাহই খাদ্য দেন। ছোট থেকে বড় করেন। সবার প্রয়োজন পূরণ করেন। অসংখ্য তাঁর অনুগ্রহ। তাঁর নিয়ামত গণনা করে শেষ করা যায় না। তাঁর নিয়ামত লাভ করেই আমরা বেঁচে আছি। তিনিই সারা বিশ্ব লালন- পালন করছেন। তিনিই নিখিল বিশ্বের পালনকর্তা ।

চন্দ্র-সূর্য,পশু-পাখি, জীব-জন্তু, আলো-বাতাস, পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, সাগর-মহাসাগর, আসমান-জমিন সবকিছু তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সব সৃষ্টিকে তিনি মানুষের আজ্ঞাবহ করে দিয়েছেন। আমরা আল্লাহর আদেশ মতো তাঁর সব নিয়ামত ভোগ করব। আর একমাত্র তাঁরই আনুগত্য করব। তাঁরই শোকর আদায় করব।

অর্থ : সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর, যিনি সারা বিশ্বের পালনকর্তা।

আল্লাহ আমাদের একমাত্র রব। আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা বলে, 'আমাদের রব আল্লাহ' এবং এর ওপর অবিচলিত থাকে, তাদের নিকট ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হইও না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও”। (সূরা: হা-মিম সাজদাহ, আয়াত: ৩০)

পরিকল্পিত কাজ: শিক্ষার্থীরা পানিচক্রের একটি ছবি আঁকবে।

Content added || updated By

মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে অন্যায় করে ফেলে। পাপ কর্ম করে বসে। তখন যদি সে অনুতপ্ত হয়, ভুল স্বীকার করে, পাপ কাজ থেকে ফিরে আসে এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে আস্তরিকভাবে ক্ষমা চায়, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হইও না। আল্লাহ্ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (সুরা যুমার, আয়াত: ৫৩)

আমাদের ভুল হলে সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাইব। আল্লাহ আমাদের মাক করে দেবেন। এরপর আমরা সাবধান থাকব, যেন আর কোনো ভুল না হয় ।

Content added By

আমরা অনেক সময় অপরাধ করি। আল্লাহ আদেশ লঙ্ঘন করি। আল্লাহ তায়ালা সাথে সাথে শাস্তি দেন না। আল্লাহ্ তায়ালা যদি আমাদের অপরাধের জন্য সাথে সাথে শান্তি দিতেন তাহলে আমরা কেউ বাঁচতে পারতাম না। আল্লাহ অতি সহনশীল। তিনি সহনশীলতা পছন্দ করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

অর্থ : আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, অতি সহনশীল। (সূরা নিসা, আয়াত: ১২)

 

Content added || updated By

আল্লাহ সব শোনেন। আমরা প্রকাশ্যে যা বলি, তা তিনি শোনেন। গোপনে যা বলি, তা-ও তিনি শোনেন। আমরা মনে মনে যা বলি, তা-ও তিনি শোনেন। তাঁর কাছে গোপন কিছুই নেই। আল্লাহ সর্বশ্রোতা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮১)

আমরা অন্যায় কিছু বলব না। কারণ আল্লাহ তায়ালা শোনেন। আমরা কাউকে গালি দেব না, কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করব না। মিথ্যা কথা বলব না। ওয়াদা ভঙ্গ করব না। কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেব না। কারণ মহান আল্লাহ সব জানেন, সব শোনেন।

আমরা অনেক কিছুই দেখি না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দেখেন। আমরা গোপনে যা করি, তা-ও তিনি দেখেন। প্রকাশ্যে যা করি, তা-ও তিনি দেখেন। সাগরের তলদেশে, পভীর অন্ধকারে ক্ষুদ্র পোকার নড়াচড়াও তিনি দেখেন। তাঁর কাছে অদৃশ্য কিছুই নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শোনেন, সব দেখেন। (সূরা লোকমান, আয়াত: ২৮)

আমরা কর্তব্য কাজে অবহেলা করব না। কথা দিয়ে কথা ভঙ্গ করব না। অন্যায় কাজ করব না। কারো ওপরে অত্যাচার করব না। কারণ মহান আল্লাহ সব শোনেন, সব দেখেন।

আমরা জানি, আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছু আল্লাহর শক্তির অধীন। আল্লাহ তায়ালা কারো ভালো করতে চাইলে কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ কারো ক্ষতি করতে চাইলে কেউ তা রোধ করতে পারে না। আল্লাহ সর্বশক্তিমান।

        আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন।

 যার নিকট থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। 

               যাকে ইচ্ছা সম্মান দেন 

            যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন 

আর যাকে ইচ্ছা অফুরন্ত জীবিকা দান করেন।

অর্থ: নিশ্চয়ই তুমি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ২৬)

আমরা জানলাম, আল্লাহ্ পালনকর্তা। আমরাও সৃষ্টজীবকে লালন-পালন করব।

আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল। আমরা ক্ষমা করতে শিখব। আল্লাহ অতি সহনশীল। আমরাও সহনশীল হব। ধৈর্য ধরব। আল্লাহ সব শোনেন। আমরা অন্যায় কথা কখনো বলব না । আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আমরা ইমান রাখব জীবনের সুখ-দুঃখের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ওপর।

পরিকল্পিত কাজ: শিক্ষার্থীরা আল্লাহ তায়ালার সাতটি গুণবাচক নামের তালিকা তৈরি করবে।

Content added By

তাওহিদের পর ইসলামের দ্বিতীয় মৌলিক বিশ্বাস হচ্ছে রিসালাত। রিসালাত অর্থ বার্তাবহন। যে ব্যক্তি একজনের কথা অন্যজনের কাছে নিয়ে পৌঁছায়, তাকে বলা হয় বার্তাবাহক বা রাসুল। কিন্তু ইসলামি পরিভাষায় যিনি আল্লাহর বাণী তাঁর বান্দাদের কাছে নিয়ে পৌঁছান এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তাদের সৎপথে পরিচালিত করেন, তাঁকে নবি বা রাসুল বলা হয়। নবি-রাসুলের কাজ বা দায়িত্বকে রিসালাত বলে।

আমরা জানি, যিনি গাড়ি তৈরি করেন তিনিই এর কলকজা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন। কীভাবে গাড়ি চালালে ভালো থাকবে, দুর্ঘটনা ঘটবে না, তা তিনিই ভালো জানেন। সবাই তার কথামতো গাড়ি চালায়। তার কথামতো না চালালে গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মানুষ মারা যায় ।

মানুষ, পৃথিবী ও আকাশের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তায়ালা। তিনিই সবকিছুর লালনপালন করেন । তিনিই জানেন কিসে রয়েছে মানুষের মঙ্গল। কোন পথে চললে মানুষের সুখ হবে, শান্তি হবে, তাও তিনি জানেন। কীভাবে জীবনযাপন করলে দুঃখ থেকে বাঁচা যায়,কষ্ট থেকে বাঁচা যায়, তাও তিনি জানেন। তিনি মহাজ্ঞানী। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জ্ঞান রাখেন।

কোন পথে মানুষের কল্যাণ, কোন পথে মানুষের সুখ, কোন পথে মানুষের ভবিষ্যৎ হবে মঙ্গলময়, কোন পথে রয়েছে মানুষের ক্ষতি- এসব বিষয় আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা পাঠালেন নবি ও রাসুল ।

নবি-রাসুলগণ আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। তাঁরা নিষ্পাপ। আল্লাহর নিকট থেকে ওহির মাধমে তাঁরা জ্ঞান লাভ করতেন। ওহি মানে আল্লাহর বাণী। হযরত জিবরাইল (আ) ওহি নবি-রাসুলগণের কাছে নিয়ে আসতেন।

নবি-রাসুলগণের জীবনের লক্ষ্য ছিল মানুষের কল্যাণ সাধন করা। আর আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে মানুষের জীবন গঠন করা। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর পথে, কল্যাণের পথে ডাকতে অনেক কষ্ট করেছেন। কিছুতেই তাঁরা থেমে যান নি। অবিচলভাবে কাজ করে গিয়েছেন ৷

নবি-রাসুলগণের মূল শিক্ষা ছিল :

১. তাওহিদ : আল্লাহ এক। তাঁর কোনো শরিক নেই। 

২. রিসালাত : আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছানো। 

৩. দীন : আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষকে জানানো। 

৪. আখলাক : চারিত্রিক গুণ ও ভালো ব্যবহারের নিয়ম-কানুন শিক্ষাদান।

৫. শরিয়ত : হালাল-হারাম ও জায়েজ-নাজায়েজের শিক্ষা প্ৰদান ৷ 

৬. আখিরাত : মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে জানানো।

পৃথিবীর প্রত্যেক এলাকার মানুষকে এই কথাগুলো শেখানোর জন্য নবি-রাসুলগণ এসেছেন। তাঁরা ছিলেন পথপ্রদর্শক।

অর্থ : প্রত্যেক জাতির জন্য পথপ্রদর্শক এসেছেন। (সূরা রা'দ, আয়াত: ৭)

হযরত আদম (আ) থেকে আমাদের মহানবি (স) পর্যন্ত বহু নবি-রাসুল পৃথিবীতে এসেছেন। তাঁরা সকলেই আল্লাহর তাওহিদের কথা বলেছেন। তাঁর বিধানসমূহ মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন। কথায়, কাজে এবং আচার-ব্যবহারে তাঁরা ছিলেন আদর্শ ও চরিত্রবান। যারা তাঁদের আদর্শ গ্রহণ করেছে তারা নাজাত পেয়েছে। আল্লাহর রহমত লাভ করেছে। আর যারা তাঁদের বিরোধিতা করেছে, তাঁদের কথা মানেনি তারা হয়েছে ধ্বংস।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবি। তাঁর পরে আর কোনো নবি আসেন নি। আসবেনও না। এজন্য তাকে বলা হয় খাতামান্নাবিয়্যীন। খাতামান্নাবিয়্যীন অর্থ সর্বশেষ নবি।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা আল্লাহ তায়ালার প্রতি ইমানের নৈতিক উপকার সম্পর্কে একটি তালিকা তৈরি করবে।

Content added By

তৃতীয় যে বিষয়ের ওপর হযরত মুহাম্মদ (স) আমাদের ইমান আনতে নির্দেশ দিয়েছেন তা হচ্ছে আখিরাত।

প্রায় প্রতিদিনই আমরা বহু মানুষের মৃত্যুর সংবাদ শুনি। পাড়ার কেউ মারা গেলে আমরা খবর নিতে যাই। গোসল দিয়ে, কাফন পরিয়ে এক স্থানে জড়ো হয়ে মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ি। দোয়া করি। পরে কবরে দাফন করি। পৃথিবীতে কিছুই অমর নয়। যার জন্ম আছে, তার মৃত্যুও আছে। কিন্তু মৃত্যুতেই সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। মৃত্যুর পরও এক জগৎ আছে। মৃত্যুর পরবর্তী জগৎকে বলা হয় আখিরাত। আখিরাত অর্থ পরকাল।

মায়ের পেটে শিশু যেমন বুঝতে পারে না পৃথিবী কত বড়, কত সুন্দর; তেমনি মৃত্যুর আগে কেউ জানে না আখিরাত কত বিরাট এক জগৎ। আখিরাত সম্পর্কে নবি-রাসুলগণ ওহির মাধ্যমে জ্ঞান পেয়েছেন। নবিগণ ছিলেন সত্যবাদী এবং আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। তাঁদের কাছ থেকেই আমরা আখিরাত সম্পর্কে জ্ঞান পেয়েছি।

হযরত আদম (আ) থেকে শেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্ত সব নবি-রাসুলই বলেছেন আখিরাতের কথা। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের কথা। মৃত্যুর পরের জীবন অনন্তকালের জীবন। সে জীবনের শেষ নেই। 

আখিরাত সংক্রান্ত যে বিষয়ের ওপর ইমান আনা জরুরি তা হলো :

১. কবরে সওয়াল - জওয়াব। 

২. কবরে আরাম অথবা আজাব । 

. এক দিন আল্লাহ তায়ালা সমগ্র বিশ্বজগৎ ও তার ভেতর সৃষ্টিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। এ দিনটির নাম হলো কিয়ামত। 

৪. আবার তাদের সবাইকে দেওয়া হবে নতুন জীবন এবং তারা সবাই এসে হাজির হবে আল্লাহর সামনে। একে বলা হয় হাশর।

৫. সকল মানুষ তাদের পার্থিব জীবনে যা করেছে তার আমলনামা আল্লাহর আদালতে পেশ করা হবে। 

৬. আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ব্যক্তির ভালোমন্দ কাজের পরিমাপ করবেন। আল্লাহর মিযানে যার সৎকর্মের পরিমাপ অসৎ কর্ম অপেক্ষা বেশি হবে, আল্লাহ্ তায়ালা তাকে মাফ করবেন। আর যার অসৎ কর্মের পাল্লা ভারি থাকবে, আল্লাহ তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেবেন। 

৭. আল্লাহর কাছ থেকে যারা ক্ষমা লাভ করবে তারা জান্নাতে চলে যাবে। আর যাদের শাস্তি দেবেন তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

 

Content added By

সওয়াল-জওয়াব অর্থ প্রশ্ন এবং উত্তর। মৃত্যুর পর প্রত্যেক মানুষকেই সওয়াল- জওয়াবের সম্মুখীন হতে হবে। কবরে দুইজন ফেরেশতা আসেন এবং মৃত ব্যক্তিকে তিনটি প্রশ্ন করেন।

১.

তোমার রব কে?

২.

অর্থ : তোমার দীন কী?

৩.  মহানবি (স) কে দেখিয়ে বলা হবে :

মহানবি (স) আমাদের এগুলোর সঠিক উত্তর শিখিয়ে দিয়েছেন।

প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো :

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো :

তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো:

পৃথিবীতে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কথামতো চলছে, তারা সবাই এ প্রশ্নগুলোর ঠিক ঠিক উত্তর দিতে পারবে। তারা হবে সফলকাম। কিন্তু যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কথামতো চলত না, তারা সঠিক উত্তর দিতে পারবে না। আফসোস করে বলবে, হায়! আমি তো কিছু জানি না ।

Content added By

কবর হলো আখিরাতের প্রথম ধাপ। পৃথিবীতে যারা পাপ কাজ থেকে বিরত রয়েছে, তারা কবরের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে। তাদের জন্য কবর হবে আরাম ও শান্তিময় স্থান। জান্নাতের সাথে তাদের যোগাযোগ করে দেওয়া হবে। সেখানে তারা জান্নাতের শাস্তি অনুভব করবে।

আর যারা পাপী, তারা সঠিক উত্তর দিতে পারবে না। তাদের জন্য কবর হবে আজাবের স্থান। আজাব অর্থ শান্তি। জাহান্নামের সাথে তাদের কবরের যোগাযোগ করে দেওয়া হবে। সেখানে তারা ভীষণ আজাব ভোগ করবে। আমরা পাপ কাজ থেকে বিরত থাকব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন।

Content added By

এমন একদিন ছিল যখন এই নিখিল বিশ্ব এবং এর কোনো কিছুই ছিল না। আল্লাহ তায়ালা তাঁর মহান কুদরতে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আবার মানুষের অবাধ্যতা যখন চরমে পৌঁছাবে, আল্লাহর নাম নেওয়ার মতো একটি লোকও থাকবে না, সেদিন আল্লাহ এই বিশ্বজগৎ এবং এর সবকিছু ধ্বংস করে দেবেন। একেই বলে কিয়ামত। বিশ্বজগতের এরূপ পরিণতি বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, এমন এক সময় আসবে যখন সূর্য শীতল হয়ে যাবে, চাঁদের আলো থাকবে না। গ্রহ-উপগ্রহের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটবে। পৃথিবী এবং এর সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।

বিশ্বজগৎ ধ্বংস হওয়ার অনেক বছর পর আল্লাহ তায়ালা সবাইকে পাপ-পুণ্যের বিচারের জন্য পুনরায় জীবিত করবেন। সবাইকে সেদিন আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। একে বলা হয় হাশর। এদিন আমাদের সব কথা ও কাজের হিসাব দিতে হবে। যারা মুমিন এবং যারা পৃথিবীতে ভালো কাজ করেছে, তারা সেদিন আল্লাহর অনুগ্রহ পাবে। তারা নিরাপদে থাকবে। আর যারা ইমান আনে নি, ভালো কাজ করে নি, তারা ভীষণ বিপদের সম্মুখীন হবে। তাদের কষ্টের সীমা থাকবে না।

আমরা যা করি, যা বলি, আল্লাহ সবই সংরক্ষণ করেন। আমাদের চলাফেরা, আচার- আচরণ, ভালোমন্দ, পাপ-পুণ্য সবকিছু লিখে রাখা হয়। একে বলা হয় আমলনামা। আল্লাহর হুকুমে একদল ফেরেশতা সবকিছু লিখে রাখেন। এই ফেরেশতাদের বলা হয় কেরামান কাতেবিন। হাশরের দিন আমাদের পাপ ও গুণ্যের আমলনামা ওজন করা হবে। যার দ্বারা ওজন করা হবে তাকে বলে মিযান । মিযান অর্থ পরিমাপযন্ত্র । ওজনে যাদের নেক কাজ বেশি হবে তারা হবে জান্নাতের অধিকারী। যাদের পাপ বেশি হবে তারা হবে জাহান্নামী।

জান্নাত ও জাহান্নাম

জান্নাত হলো চিরস্থায়ী সুখের স্থান। সেখানে কেবল শান্তি আর শান্তি। আনন্দ আর আনন্দ। পৃথিবীতে যারা ছিল ইমানদার, যারা ছিল ভালো, তারা চিরদিনের জন্য সেখানে বাস করবে। জান্নাতে আছে আরামের সব রকমের ব্যবস্থা। মন যা চাইবে সেখানে তাই পাওয়া যাবে। সেখানে আছে উত্তম খাদ্য, পানীয় এবং সুন্দর বাগান ও ফলফলাদি।

সেখানে কোনো অভাব নেই, অশান্তি নেই, কোনো দুঃখ-বেদনাও নেই।

জাহান্নাম হলো চিরস্থায়ী কষ্টের স্থান। পৃথিবীতে যারা ইমান আনে নি, ভালো কাজ করে নি, তারা সেখানে চিরদিন বাস করবে।

জাহান্নামে কেবল দুঃখ আর দুঃখ। সেখানে আছে ভীষণ ও ভয়ংকর শাস্তি । যেমন আগুনে পোড়ানো, সাপের দংশন, আরো নানা রকম শাস্তি ।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা আখিরাতের জীবনের স্তরগুলো উল্লেখ করে এর একটি তালিকা তৈরি করবে।

Content added || updated By

আখিরাত সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (স) যা শিক্ষা দিয়েছেন, তাঁর আগেকার নবিগণও ঠিক তাই বলেছেন। আখিরাত ব্যাপারটি ভালো করে চিন্তা করলে বুঝতে পারা যায় যে, আখিরাতের স্বীকৃতি ও অস্বীকৃতি মানুষের জীবনে বিরাট প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। আখিরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তি আল্লাহর পথে গরিবকে যাকাত দেন। তিনি মনে করেন না, এতে তাঁর সম্পত্তি কমে যাবে। তিনি সবসময় সত্য কথা বলেন এবং মিথ্যা থেকে বিরত থাকেন । কুড়িয়ে পাওয়া কোনো মূল্যবান বস্তু পেলে তিনি মনে করেন, এ বস্তু তাঁর নয়। এটি তিনি গ্রহণ করতে পারেন না ।

সোজা কথায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম তাঁকে এক বিশেষ পথে চলার নির্দেশ দেয় । কেননা ইসলামে প্রতিটি জিনিসের মূল্য নির্ধারিত হয় আখিরাতের ফলাফলের ওপর। কিন্তু আখিরাতে অবিশ্বাসী ব্যক্তি প্রত্যেক ব্যাপারে ইহকালের ফলাফলের উপর গুরুত্ব দেয় ।

Content added By

মুসলিম চরিত্রে থাকবে আল্লাহ তায়ালার ভয় । সবকিছুর মালিক আল্লাহ তায়ালা-এ ধারণা নিয়ে পৃথিবীতে সে বাস করবে। সারা পৃথিবীর মানুষের দখলে যা কিছু আছে,সবই আল্লাহর দান। কোনো জিনিসের এমনকি আমার নিজের দেহের মালিকও আমি নিজে নই। সবকিছু আল্লাহ তায়ালার দেওয়া আমানত। এ আমানত থেকে খরচ করার যে স্বাধীনতা আমাকে দেওয়া হয়েছে, আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী তা খরচ করাই হলো আমার কর্তব্য। একদিন আল্লাহ তায়ালা আমার কাছ থেকে এ আমানত ফেরত নেবেন। কিয়ামতের দিন আমাকে প্রত্যেকটি জিনিসের হিসাব দিতে হবে।

এ ধারণা নিয়ে যে ব্যক্তি বেঁচে থাকে, তার চরিত্র হবে সুন্দর। মন্দ চিন্তা থেকে সে তার মনকে মুক্ত রাখবে। কানকে দূরে রাখবে অসৎ আলোচনা শোনা থেকে। কারোর প্রতি কুদৃষ্টি দেওয়া থেকে চোখকে হেফাজত করবে। মিথ্যা কথা বলা থেকে জিহ্বাকে হেফাজত করবে। হারাম জিনিস দিয়ে সে পেট ভরবে না। সে না খেয়ে থাকবে তবুও কারোর প্রতি সে জুলুম করবে না। সে কখনো অন্যায়ের পথে তার পা বাড়াবে না। মিথ্যার সামনে সে তার মাথা নত করবে না। তার চরিত্রে থাকবে সততা ও মহত্ত্বের সমাবেশ। সত্য ও ন্যায়কে পৃথিবীর সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয় মনে করবে। জুলুম ও অন্যায়কে সে ঘৃণা করবে। এ শ্রেণির লোকই সাফল্য অর্জন করতে পারে। যার অন্তরে আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় স্থান পায় না, আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে সে পুরস্কার চায় না, তার চেয়ে বড় ইমানদার আর কে? কোন শক্তি তাকে বিচ্যুত করতে পারে সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে? কোন সম্পদ ক্রয় করতে পারে তার ইমানকে?

তার চেয়ে বেশি বিশ্বস্ত পৃথিবীতে আর কেউ হতে পারে না। কারণ সে কারোর আমানত বিনষ্ট করে না। ন্যায়ের পথ থেকে সে মুখ ফেরায় না। কথা দিয়ে কথা রাখে, ভালো ব্যবহার করে। আর কেউ দেখুক আর না দেখুক, আল্লাহ তো সব কিছুই দেখছেন - এ ধারণা নিয়ে সে সবকিছুই করে ইমানদারির সাথে। এমন লোককে সবাই স্নেহ করে, সম্মান দেয়। এমনি করে পৃথিবীতে ইজ্জত ও সম্মানের সাথে জীবন অতিবাহিত করে যখন সে আল্লাহর সামনে হাজির হবে, তখন তার ওপর বর্ষিত হবে আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ ও রহমত। এ হলো মহাসাফল্য ।

দলীয় কাজ

শিক্ষার্থীরা দলে বসে পরস্পর আলাপ-আলোচনা করে একজন মুসলিমের চরিত্র কেমন হবে এর একটি তালিকা তৈরি করে মার্কার দিয়ে পোস্টার পেপারে লিখবে। সবচেয়ে ভালো তালিকাটি শ্রেণিকক্ষে ঝুলিয়ে রাখবে।

Content added By

# শূন্যস্থান পূরণ কর :

১. আনুগত্যের জন্য …………. প্রয়োজন ।

২. আল্লাহ তায়ালার গুণে ……………. গুণান্বিত করতে হবে।

৩. আল্লাহ তায়ালা আমাদের………………।

৪. আমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ....………. করব।

৫. আমরা কথা দিয়ে কথা…………...।

 

# ডান পাশের সঠিক শব্দগুলো দিয়ে বাম পাশের শব্দগুলোর সাথে মিল কর।

        বাম                                          ডান

১. গাফুরুন অর্থ                      অতি সহনশীল

২. হালিমুন অর্থ                     অতি ক্ষমাশীল

৩. রাসুল অর্থ                      চিরস্থায়ী সুখের স্থান

8. জান্নাত হলো                   চিরস্থায়ী কষ্টের স্থান

৫. জাহান্নাম অর্থ                     বার্তাবাহক

 

# সংক্ষিপ্ত উত্তর—প্রশ্ন:

১. ইমান শব্দের অর্থ কী ?

২. সারা বিশ্বের পালনকর্তা কে?

৩. আমাদের দীনের নাম কী ?

8. আমরা কী বলে আল্লাহর শোকর আদায় করব? 

৫. আখিরাত মানে কী?

 

# বর্ণনামূলক প্রশ্ন

১. আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে জানা ও ইমান আনার জন্য আমাদের কী কী জানা জরুরি ? 

২. মুমিন কাকে বলে? ইমানের ফল কী?

৩. সারা বিশ্বের পালনকর্তা কে? তাঁর লালন-পালনের একটি বর্ণনা দাও ৷ 

8. আল্লাহ তায়ালার ৫টি গুণের নাম বাংলা অর্থসহ আরবিতে লেখ। 

৫. আল্লাহ ক্ষমাশীল তা বুঝিয়ে লেখ । 

৬. নবি-রাসুলগণের শিক্ষার মূল কথাগুলো কী কী? 

৭. আখিরাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কী কী? 

৮. একজন মুসলিমের চরিত্র কেমন হওয়া উচিত-এ সম্পর্কে ১০টি বাক্য লেখ।

Content added || updated By
আব্বা-আম্মা
আল্লাহ তায়ালা
ডাক্তার
পীরমুর্শিদ
মানুষের গুণাবলিকে
ফেরেশতার গুণাবলিকে
আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহকে
নবিগণের গুণাবলিকে ।
পালনকর্তা
সৃষ্টিকর্তা
রিজিকদাতা
দয়ালু ৷
সর্বশ্রোতা
সহনশীল
সর্বশক্তিমান
সর্বদ্রষ্টা।
সব শোনেন
সব জানেন
সব দেখেন
অতিসহনশীল।